আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অম্ল-মধুর নাটকীয়তায় ভরা ৭৮ বছরের ডোনাল্ড ট্রাম্পের জীবন। কী নেই তাঁর জীবনে। নন্দিত, নিন্দিত; সমালোচিত-প্রশংসিত; আছে জানা-অজানা শত্রু, বন্ধুও কম নয়; যেমন আছে ব্যর্থতা, তেমনি আছে বিশ্বকে চমকে দেবার মত সাফল্য। একবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়ে, আরেকবার হেরেছেন। তারপর চার বছরের বিতর্ক-বাধাকে জয় করে আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত।
২০১৬ সালে আমেরিকার রাজনীতিতে আকস্মিকভাবে ব্যবসায়ী ডোনাল্ড জে ট্রাম্পের আবির্ভাব। তখন তাঁর বয়স ছিল সত্তর, এখন আটাত্তর। আমেরিকার নিউইয়র্কের কুইন্সে ১৯৪৬ সালের ১৪ই জুনজন্ম নেয়াট্রাম্প মঙ্গলবার আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরল ইতিহাস গড়েছেন। এমন ভাঙা-গড়ার গল্প তাঁর জীবনজুড়ে।
নিউইয়র্কের আবাসন ব্যবসায়ী ফ্রেড ট্রাম্প ও স্কটিশ বংশোদ্ভূত মা মেরি ট্রাম্পের পাঁচ সন্তানের মধ্যে ট্রাম্প চতুর্থ। বিদ্যাপাঠ নেন নিউইয়র্ক মিলিটারি অ্যাকাডেমি স্কুলে। ১৯৬৮ সালে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ারটন স্কুল থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি নেন।
ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হলেও বাবার প্রতিষ্ঠানে ছোট পদে চাকরী দিয়ে পেশাজীবন শুরু করেন ট্রাম্প। বাবার ব্যবসার প্রসার ঘটান।ধীরে ধীরে গড়েন হোটেল, বহুতল ভবন, গলফ কোর্স, ক্যাসিনোসহ বিচিত্র ব্যবসা। যেমনÑ মিস ইউনিভার্সের স্পনসর হন। ‘দ্য অ্যাপ্রেনটিস’ নামের টিভি রিয়্যালিটি শো উপস্থাপনা করে সেলিব্রিটি হন। রেসলিং খেলা উপস্থাপনা করেন। ট্রাম্প কয়েকবার নিজেকে দেউলিয়াও ঘোষণা করেছেন। মামলা ঠুকেছেন, মামলা খেয়েওছেন।
তিন বিয়ে ট্রাম্পের। সন্তানপাঁচজন। প্রথম দুটি সংসার ভাঙার পর ২০০৫ সালে তৃতীয় বিয়ের বন্ধনে জড়ান বর্তমান স্ত্রীমডেল মেলানিয়ার সাথে।
২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেপ্রথম হৈচৈ ফেলেছিলেন ট্রাম্প। নানা সমালোচনা-হাসিঠাট্টা সত্ত্বেওদৃঢ় প্রতিজ্ঞট্রাম্প ২০১৬ সালেডেমোক্রেট হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হন।
তবে প্রেসিডেন্ট হবার আগে পরে নানা কারণে ট্রাম্প নিন্দা, আলাচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে থাকেন। কিন্তু তার ভক্ত-সমর্থকরা তাকে ছেড়ে যায়নি। ২০২০ সালে নিজের প্রেসিডেন্ট মেয়াদ শেষে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ান ট্রাম্প। কিন্তুহেরে যান বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে। কারচুপির অভিযোগ তোলেন এবং চার বছর পর এবছরের নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তখনও কেউ বিশ্বাস করেনি তাঁর কথা। বরং রাজনৈতিক সহিংসতা, নানা রকমের প্রতারণা, দুর্নীতি, অন্যায় ও শপথ ভঙ্গের অভিযোগে মামলা, বিচার ও নিন্দার ভারে ট্রাম্পকে রাজনীতি থেকে ছুড়ে ফেলা হবে, এমন আশংকাই বেশি ছিল। সব চেষ্টায় ছাই দিয়ে প্রার্থীহন ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তাঁকে হত্যার চেষ্টাওকরা হয়, কিন্তু বেঁচে যান।
তাকে ঠেকানোর সব চেষ্টাকে আমেরিকানদের ভোটের রায় দিয়ে ধুলোর সাথে মিশিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। আমেরিকায় বিরল ইতিহাস গড়ে ৪৭তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে এখন তাঁর আবার হোয়াইট হাউজনিবাসী হবার পালা।