আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দ্বিতীয়বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে ইউরোপীয় নেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটো নেতারা বেশ আগে থেকেই প্রকাশ্যেই ট্রাম্পের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন এই যুক্তিতে যে, ট্রাম্পের জয়ে চাপে পড়তে পারে ন্যাটো। ইউক্রেনে আমেরিকার অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা কমতে পারে। কোন কোন বিশ্লেষকের অভিমত, হোয়াইট হাউসে আবার ট্রাম্পযুগে সুবিধা হবে রাশিয়ার।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে তাবত বিশ্বের মানুষের তুমুল আগ্রহের কারণ, বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকার প্রভাব। আগামী চার বছর আমেরিকার অভ্যন্তরীণ নীতিসহ বিশ্ব রাজনীতির মেরুকরণ কে করবে- সেই আগ্রহ থেকে বিশ্ববাসীর নজর ছিল ফলাফলের দিকে। বুধবার বাংলাদেশ সময় দুপুরের আগেই পরিস্কার হয়ে যায় হোয়াইট হাউসে আবার ফিরছেন রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্পের জয়ের খবরে অস্বস্তি ও উৎকণ্ঠায় পড়েছে আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলো। ইউরোপীয় টেলিভিশন নেটওয়ার্ক- ‘ইউরো নিউজ’ তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, ট্রাম্পের আমলে আমেরিকা নতুন ধরনের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে অগ্রসর হবে। যার প্রধান লক্ষ্য হবে নিজস্ব স্বার্থ রক্ষা। আর এই জন্যে শিল্প বাজারে ইইউ-ভুক্ত দেশের পণ্যেও ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে আমেরিকা।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মিত্র দেশগুলোকে আর আগের মতো একচেটিয়াভাবে রাজনৈতিক ও সামরিক সুরক্ষা দেবে না ওয়াশিংটন। সম্পর্কের বাঁকবদলের আশংকায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এরইমধ্যে কূটনৈতিক কৌশল নির্ধারণ করেছে ইউরোপীয় কমিশন। কিন্তু উৎকণ্ঠাকে সাথে নিয়েই ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান। অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের নেতারাও।
ট্রাম্পের জয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এই বিজয়কে ‘ইউক্রেন ব্রেক’ বলে অভিহিত করেছে কিয়েভ কর্তৃপক্ষ। রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে ইউক্রেনে আমেরিকার সামরিক ও আর্থিক সহায়তা কমে যাবে বলেও তাদের আশংকা। তবে ট্রাম্পের বিজয়ে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জেলেনস্কি। এক্স পোস্টে তার প্রত্যাশা, ট্রাম্পের বিজয় ইউক্রেনে ন্যায্য শান্তি আনবে।
সংবাদমাধ্যম পলিটিকো জানিয়েছে, ট্রাম্প আবার হোয়াইট হাউজে ফেরায় খুশি রাশিয়া। কারণ নির্বাচনী প্রচারণার সময় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন ট্রাম্প। এছাড়া তার শাসনামলে রাশিয়ার ওপর থেকে উঠে যেতে পারে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। ট্রাম্পের জয়ের মাধ্যমে মস্কো এবং ওয়াশিংটনের সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে ট্রাম্পকে এখনও অভিনন্দন জানাননি রুশ প্রেসিডেন্ট।
তবে কোনো আশার আলোই দেখছে না আরব বিশ্ব। ইসরাইলের হারেৎজ নিউজ জানিয়েছে, বাইডেন সরকারের তুলনায় ট্রাম্প প্রশাসন হামাস ও হিজবুল্লার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইসরাইলকে আরও বেশি সমর্থন ও সহায়তা দেবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে-এ এক পোস্টে ট্রাম্পের বিজয়কে ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন বলে অভিহিত করে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ট্রাম্পের আরেক মেয়াদ ইরানের জন্য অত্যন্ত উৎকণ্ঠার হবে বলেই আশঙ্কা তেহরানের। সরাসরি সংঘাতে না জড়ালেও ইসরাইলকে ব্যবহার করে সামরিক স্থাপনায় হামলা বাড়াতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন। কঠোর নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে ইরানের তেল বাণিজ্যের ওপরও।