বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ক্যাটারিং সেন্টার বিএফসিসি’কে ঘিরে গড়ে উঠেছে স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ ক্ষেত্র। এর নেপথ্যে রয়েছে বিএফসিসি’র অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারিদের সিন্ডিকেট। সম্প্রতি স্বর্ণ পাচারের সময় বিএফসিসি’র একজন কর্মী আটকের ঘটনায় প্রকাশিত হয়েছে এই সিন্ডিকেটের অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। চোরাচালান ছাড়াও বিএফসিসির মহাব্যবস্থাপক ইকবাল আহমেদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগও বিস্তর। ইতোমধ্যে তাকে অব্যাহতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাশাপাশি বিদেশি বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে খাবার পরিবেশন ও কেবিন ড্রেসিংয়ের দায়িত্ব পালন করে বিমানের ক্যাটারিং সেন্টার বিএফসিসি। এসব খাবার ফ্লাইটে পৌঁছে দেয়ার প্রয়োজনে কর্মীরা ব্যবহার করে বিমানবন্দরের অ্যপ্রোন এলাকার লাগোয়া বিএফসিসির পেছনের গেট। এই সুযোগে হাত বদল হয়ে তাদের মাধ্যমে বিএফসিসির সামনের গেট হয়ে চত্বরের বাইরে চলে আসে পাচারের স্বর্ণ।
২০২২ সালের ২৫শে মে বিএফসিসি’র কর্মী মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ আকন্দকে ৮কেজি সোনার বারসহ আটক করে ঢাকা কাস্টম হাউস। চলতি বছরের দোসরা সেপ্টেম্বর প্রায় ৫কোটি টাকার ৪০টি সোনার বারসহ আটক হয় বিএফসিসি’র আরেক কর্মী জাহাঙ্গীর আলম। সোনা পাচারের দুটি ঘটনা ধরা পড়লেও প্রকৃত পাচার আরো বেশি। সদ্য অব্যাহতি পাওয়া বিএফসিসি’র মহাব্যবস্থাপক ইকবাল আহমেদ আলীজা ২০২০ সাল থেকে নিজের বলয়ের কর্মীদের অন্যান্য বিভাগ থেকে বদলী করে এনে গড়ে তোলেন সিন্ডিকেট। এমনকি চোরাচালান ও দুর্নীতির অভিযোগে চাকুরিচ্যুত সহকারি ব্যবস্থাপক মামুনুর রশীদকে পুনর্বহাল করেন।
বিএফসিসি’র কর্মী জাহাঙ্গীর আটকের ঘটনা তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়- অনুগতদের বাঁচাতে ইকবাল আহমেদ আলীজা নিয়ম বহির্ভুতভাবে সিসিটিভির পাসওয়ার্ড নিজের আয়ত্ত্বে নিয়ে নেন।
২০২০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রথম এবং দ্বিতীয় দফায় ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ১৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএফসিসি’র মহাব্যবস্থাপক াছলেন আলীজা। বিএফসিসির ক্রয় প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মাংস সরবরাহের ঠিকাদারের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নিয়মবহির্ভুতভাবে মেয়াদ এক মাস বাড়ান তিনি। করোনাকালে যখন বিমানের বেশিরভাগ ফ্লাইট বন্ধ তখনও ওই ঠিকাদারের মাধ্যমে প্রায় দেড় হাজার কেজি মাংস ক্রয় দেখিয়ে ১২লাখ টাকারও বেশি নয়ছয় করার অভিযোগ রয়েছে।
নিরাপত্তা তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে একজন নারী সহকর্মীকে হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ দিলেও ব্যবস্থা নেননি আলীজা। এমনকি আলীজার অধীনে বিএফসিসিতে কর্মপরিবেশ না থাকার অভিযোগ করেন আরেক নারী সহকর্মী।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সাফিকুর রহমান বলেন নতুন পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নেয়ার পর এসব অনিয়মের তদন্ত শুরু করে। এর অংশ হিসেবে আলীজাকে অব্যাহতি দেয় বিমান। বিমানের সব অনিয়মের তদন্ত করা হবে বলে জানান ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
Leave a Reply