সাম্য শফিক ঢাকা
বেশ ক’দিন হলো ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছে আমার। শুধু আমার নয়, শুনেছি অনেকেরই এমন হচ্ছে। কারণ একটাই; দেশের কী হাল হলো! বাংলার মাটিতে একগুচ্ছ নক্ষত্রের পতন হলো। অতি দাম্ভিকতার রাজনীতি পরাভূত হলো। আমারা সাধারণ মানুষ কেউ উদ্বিগ্ন পক্ষান্তরে কেউ উৎফুল্ল। আজও ঘুম পাচ্ছে না। ঘুমের ভান ধরে বাউল বেশে হারিয়ে যেতে চাই দুর আকাশের অন্ধকারে। এ-ই বিষ বাস্পের শহর ছেড়ে। উপায় নেই, ঘুম আসছে না কিছুতে। মাঝ রাত্রি পেরিয়ে গেছে। গুরু জেমসের একটা গান মনে ভাসছেঃ যান্ত্রিক নগরে….এখন মাঝরাত পেরিয়ে গেছে….কিছু জেগে থাকা প্রজাপতি আর প্রহরীর হুঁশিয়ারিকিছু জেগে থাকা প্রজাপতি আর প্রহরীর হুঁশিয়ারিআমি এক নগরবাউলজেগে আছি বড় একা।কি করবো, নির্ঘুম রাত্রিতে,ভালো লাগছিলো না কিছুতে। আমি গান গাইতে-ও পারি না, গান লিখতে-ও পারি না। অগত্যায় আমার আবোলতাবোল ভাবনাগুলো লিখতে শুরু করি। আমরা প্রত্যেকে প্রত্যক্ষ স্বাক্ষ্য। দেশে চলমান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কে। তাছাড়া ২০১৮ সালের “কোটা সংস্কার” আন্দোলন-ও দেখেছি। আন্দোলনের তোড়ে সেসময়ে কোটা পদ্ধতি বাতিল হয়েছিল। কিন্তু আপিল আর আইনগত জটিলতায় কোটা ফিরে আসতে শুরু হলো। ফের ছাত্র আন্দোলন শুরু যা এখন শেষ হয়নি। এখনো রাজপথে শিক্ষার্থীরা। ওরা আমাদের অনেককিছু দেখিয়ে দিচ্ছে। শেখাচ্ছে। আমরা তো ধামাধরা, বদলাতে চাই না। শিখতেও চাই না। একই বৃত্তে আবদ্ধ থাকতে চাই সবসময়।কোটা সংস্কার আর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন-ও একই সূত্রে গাঁথা। তবে আন্দোলনের নামকরণে ঢেঁড় ফারাক আছে। একটি শব্দের মধ্যে অনেককিছু লুকিয়ে থাকে। বহুল চর্চিত বাক্যঃ বিন্দুর মধ্যে সিন্ধুর গভীরতা। আমরা সেটা প্রত্যক্ষ ভাবে দেখছি। দুটোই ছাত্র আন্দোলন দেখলাম। সফলতা-ও দুটোতেই এসেছে। স্বীকার্য যে, ছাত্র আন্দোলন কখনো বিফলে যায়নি। তবে “বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন” নামটা যথার্থ। যথেষ্ট ভালো লেগেছে আমার। বৈষম্য দুর হলে সাম্য প্রতিষ্ঠা পাবে। আর আমি, স্যামের-ই জয়গান গেয়ে থাকি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনেরসমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের বক্তব্য সেরকমই নীতিদর্শন ভাবধারার। তার মতে, রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে বৈষম্য দুর করে হবে। সমতা ফিরিয়ে আনতে হবে। বক্তব্যে সাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যণীয় আখ্যান আমাকে অভিভূত করে। আমি নিরতিশয় উৎফুল্ল। তবে; ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ভুলে গেলে চলবে না। আমরা রাতারাতি ইউরোপিয়ান বা আমেরিকান হতে পারি না। তাঁদেরও নিকৃষ্ট অতীত ইতিহাস আছে। ওসব এখন বলতে চাই না।বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণনাহিদ ইসলাম আর আসিফ মাহমুদ সজীব। তার এখন শুধুই আন্দোলনের সমন্বয়ক নন, এখন ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে গেছে। তারা এখন বৈষম্য ভরপুর আমলাতন্ত্রের ঘেরাটোপে আবদ্ধ। সাম্য শফিক ঢাকা বাংলাদেশ তোমরা পারবে তো; শীতাতপনিয়ন্ত্রক গাড়ি বাড়িতে বসে, শরীরের ঘাম ঝরাতে। মনে থাকবে তো; উত্তাল রাজপথের সংগ্রামী সমন্বয়কের কথা।ক্ষমতা আর নেতা এক নয়। এ বাংলার অতীত ইতিহাস সেটাই বলে। আমাদের এ ভৌগোলিক পরিমণ্ডলের একজন লড়াকু চারু মজুমদার ছিলেন। আমরণ নিপিড়ীত নির্যাতিত মানুষের আধিকারিক আদায়ের জন্য লড়াই করেছেন, সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য। কখনো তাকে ক্ষমতা ভোগের লোলুপ দৃষ্টি আকর্ষণ কারেনি।আমি শঙ্কিতঃ আন্দোলন আর যুদ্ধ শব্দের ব্যবহার নিয়ে। অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে আন্দোলন, সংগ্রাম, বিপ্লব, যুদ্ধ আক্ষরিক অর্থে এক হলেও ব্যবহার বিঁধিতে তফাৎ আছে। নিঃসন্দেহে তারা এসব বুঝে। এটাও বুঝি, বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের উজ্জীবিত রাখতে, যুদ্ধ শব্দটা বারংবার উচ্চারিত হচ্ছে। আমরা যেনো ভুলে না যাই, ১৯৭১ সালেই যুদ্ধ হয়েছিল। আমারা সে যুদ্ধে স্বাধীনতা পেয়েছি। তবুও মনে সংশয় হয়। যেভাবে স্বাধীনতার স্থপতিকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে। স্বাধীনতার স্মৃতিচিহ্ন, ভাস্কর্য, পুরাকীর্তি ধ্বংস করা হচ্ছে। গণভবন, সংসদ ভবন হরিলুট করা হলো। তাতে বুঝাই, আমরা আজও সভ্য হতে পারিনি। এক্ষেত্রে নচি’দার গানের কথা মনে পড়েঃরাম আছে, শ্যাম আছে, কোরাণীসেলাম আছে,রক্তলোলুপ কিছু হয় না।এদেশ টা ফাঁকা আছে, বিদেশেরটাকা আছে,ধর্ম না গ্রাস করে আমাদের পাছে ।তাই, ভয় আছেদু নয়নে ভয় আছে, মনে সংশয় আছে।তথাপী, কথিত চলমান যুদ্ধ বা আন্দোলন, যেটাই বলি না কোনো, তাতে রাষ্ট্র মেরামতের ধারা অব্যাহত থাকুক। সর্বস্তরে সমতা আসুক। চাই না, আতঙ্ক উৎকন্ঠা। চাইনা, রক্তপাত, হানাহানি, খুনোখুনি। চাইনা, আর কারোই বিনিদ্রায় রাত্রিযাপন হোক। স্বৈরতন্ত্র, বৈষম্য নিপাত যাক। সর্বস্তরে সাম্য প্রতিষ্ঠা পাক।
Leave a Reply