পুরাতন জাহাজ আমদানির পাশাপাশি মিলগুলোতে স্ক্র্যাপের যোগান বাড়ায় কমতে শুরু করেছে রডসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীর দাম। লাখ টাকা অতিক্রম করা রডের দাম এখন ৯০ হাজারে নেমে এসেছে। গত ২০ দিনে প্রকার ভেদে প্রতি টন রডের দাম কমেছে ২ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত।
ডলার সংকটের মুখে লাগামহীন হয়ে পড়া রডের দাম কমতে শুরু করেছে। ছবি: সময় সংবাদ
ডলার সংকটের মুখে লাগামহীন হয়ে পড়া রডের দাম কমতে শুরু করেছে। ছবি: সময় সংবাদ
বছরে বাংলাদেশে প্রায় ৮০ লাখ মেট্রিক টন রডের চাহিদা রয়েছে। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে এর পুরোটা যোগান দিচ্ছে দেশের রি রোলিং মিলগুলো। এই রড তৈরির কাজে ব্যবহৃত ৩০ শতাংশ হিসাবে অন্তত ২৫ লাখ মেট্রিক টন স্ক্র্যাপের চাহিদা মেটানো হয় শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে। অবশ্য বাকি ৬০ লাখ মেট্রিক টন স্ক্র্যাপ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ডলার সংকটের মুখে গত বছরের আগস্ট মাস থেকে স্ক্র্যাপের পুরাতন জাহাজ আমদানি একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে লাগামহীন হয়ে পড়ে রডের দাম। দেশের বাজারে রডের দাম ছাড়িয়েছিল লাখ টাকা। তবে অবশেষে এই শিল্পে সুদিন ফিরছে।
বছরের প্রথম ৫ মাসে পুরাতন জাহাজ আমদানির চিত্র।
চলতি বছর পুরাতন জাহাজ আমদানি বাড়তে থাকায় মিলগুলোতে এখন স্ক্র্যাপ লোহার যোগানও বাড়ছে। গত ৮ মাসে ৭ লাখ ৩১ হাজার ২৪৯ মেট্রিক টন ওজনের ১২৪টি জাহাজ কাটা হয়েছে চট্টগ্রাম শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে।
চলতি বছরের জুন থেকে আগস্ট মাসে পুরাতন জাহাজ আমদানির চিত্র।
স্ক্র্যাপের দাম কমে আসার বিষয়ে পিএইচপি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, এখন যেহেতু আবার জাহাজ আসা শুরু করেছে। তাই স্ক্র্যাপের দাম কিন্তু ৯০ হাজার টাকা নিচে চলে আসছে।
বাংলাদেশ শিপ ব্রেকিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ তাহের বলেন, আগে স্ক্র্যাপ বিক্রি করতাম ৭৮ হাজার টাকায়। এখন দাম ৭৫ হাজার টাকা। কিন্তু জাহাজেই তো খরচ পড়ছে ৮০ হাজার টাকা।
এদিকে চলতি মাসের ২০ দিনেই প্রতি মেট্রিক টন রডের দাম কমেছে ২ হাজার থেকে অন্তত ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি মেট্রিক টন বিএসআরএমের রডের দাম ৯৮ হাজার টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১ লাখ ৫০০ টাকা। এছাড়া একেএসের রডের দাম বর্তমানে ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা, কেএসআরএমের ৯৬ হাজার ৫০০ টাকা এবং বায়েজিদ স্টিলের দাম ৯০ হাজার টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল যথাক্রমে ৯৯ হাজার ৫০০ টাকা, ৯৯ হাজার টাকা এবং ৯৪ হাজার টাকা।
বিশেষ করে স্ক্র্যাপের পাশাপাশি নানা ধরনের কেমিক্যালের আমদানি বাড়ায় কমছে রডসহ নির্মাণ সামগ্রীর দাম। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের মেসার্স নজরুল ট্রেডিংয়ের মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, গত মাসে প্রতি মেট্রিক টন রড ১ লাখ টাকার কাছাকাছি বিক্রি করেছি। এক মাস পরে এসে দাম দেড় থেকে ২ হাজার টাকা কমে গেছে। এখন আমরা প্রায় দেড় হাজার টাকা কমে বিক্রি করছি।
চট্টগ্রামের মেসার্স এ বি চৌধুরীর ম্যানেজার মো. ফোরকান চৌধুরী বলেন, রড ও কেমিক্যালের দাম কমছে। সবগুলোর দামই কিছুটা কম বর্তমানে। দেশের বর্তমানে ১৫০ জন শিপ কাটিং ব্যবসায়ী রয়েছে।
বর্তমানে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপকূলের ৪০টি ইয়ার্ডে জাহাজ কাটা হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা অন্তত ২৫টির বেশি কারখানায় তৈরি হচ্ছে দেশের প্রয়োজনীয় লোহার রড ও বিলেট। তাছাড়া শিপ কাটিং ব্যবসায়ী রয়েছেন ১৫০ জন।