দেওয়ালে পিঠ ঠেকে এবার এক হয়েছেন ভারতের কৃষকরা। নিজেদের দাবি আদায়ে এক সুরে সোচ্চার হয়েছেন। দলে দলে যোগ দিয়েছেন সরকারবিরোধী বিক্ষোভ-র্যালিতে।
হাতে পতাকা, প্ল্যাকার্ড ও ব্যানারে ‘দিলি চলো’ স্লোগানে গর্জে উঠছে দেশটির কৃষক সমাজ। শত শত ট্রাক্টর আর ছয় মাসের খাবারসহ রাজধানীর পথে রওনা হয়েছেন তারা। দাবি আদায় না করে এবার ঘরে ফিরবেন না কৃষকরা।
কিন্তু মঙ্গলবার সকালে হরিয়ানার শম্ভু সীমানায় ঢুকতেই পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় কৃষকদের। এ নিয়ে দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। গন্তব্যে পৌঁছার আগেই দিল্লিকে নিশ্ছিদ্র দুর্গে পরিণত করেছে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। এনডিটিভি, আলজাজিরা।
একাধিক দাবিতে ‘দিল্লি চলো’ ডাক দিয়েছেন পাঞ্জাব, হরিয়ানার হাজার হাজার কৃষক। কিন্তু দিল্লির আগে ২০০ কিলোমিটার দূরেই শম্ভু সীমানায় আটকে যান কৃষকরা। পাঁচ হাজার কৃষক, দেড় হাজারেরও বেশি ট্র্যাক্টর এবং ৫০০ গাড়ি নিয়ে রাজধানীর অভিমুখে রওনা হয় তারা।
কৃষকদের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো : কৃষিপণ্যের সর্বনিম্ন মূল্য (এমএসপি) নিশ্চিতকরণ, ঋণ মওকুফ, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে সব মুক্তবাণিজ্য চুক্তি ও অন্যান্য চুক্তি বাতিল, বিদ্যুৎ বোর্ডের বেসরকারীকরণ স্থগিত, কৃষিতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ, করপোরেটাইজেশন নিষিদ্ধ করা এবং কৃষকদের জন্য পেনশন চালু করা।
কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এসব দাবির বিষয়ে কোনো আশ্বাস দেয়নি। তারপর কৃষকদের এ আন্দোলন পণ্ড করার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করে পুলিশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে ড্রোন থেকে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয় কৃষকদের দিকে। কাঁটাতারের বেড়া এবং কংক্রিটের ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকানোর চেষ্টা করা হয়।
উল্লেখ্য, দিল্লিতে প্রবেশের জন্য তিনটি মূল প্রবেশপথ রয়েছে। সিঙ্ঘু, টিকরি এবং গাজহিপুর। এই তিন সীমানাই ২০২০ সালের আন্দোলনে কৃষকদের দখলে চলে গিয়েছিল। সে সময়ও নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন আন্দোলনকারী কৃষকরা।
সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আরও অনেক সাবধান হয়েছে দিল্লি পুলিশ। তিন সীমানায় বেশ কয়েক স্তরীয় নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। বিশাল বিশাল ভারী কংক্রিটের ব্যারিকেড নিয়ে এসে সীমানাগুলোতে দেওয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে। সেই ব্যারিকেডের সামনে লাগানো হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া।
এ ছাড়াও ট্র্যাক্টরের সাহায্যে ব্যারিকেড ভেঙে ঢুকে পড়লেও যাতে এগোতে না পারে সেজন্য রাস্তায় পেরেক পোঁতা হয়েছে। তার পরের নিরাপত্তা স্তর হিসাবে রাখা হয়েছে বড় বড় ট্রাক। এমন কড়া নিরাপত্তার পরও কৃষকদের এই অভিযান আটকাতে মোতায়েন করা হয়েছে ৫০ কোম্পানির বেশি আধাসেনা। তাদের পাশাপাশি অবস্থান করবে দিল্লি পুলিশও।
বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, কাঁদানে গ্যাস লঞ্চার, হেলমেট, ব্যাটন এবং অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত থাকবে তারা। পাশাপাশি কৃষকদের ঠেকাতে লোহার ব্যারিকেড, জার্সি ব্যারিয়ার্স, বিশাল বিশাল শিপিং কনটেইনার, হাইড্রা ক্রেন, জলকামান, বাস এবং অন্যান্য গাড়িরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কৃষক আন্দোলন প্রতিরোধের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে একাধিক পরিকল্পনা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। হরিয়ানা সরকার তড়িঘড়ি দুটি বড় স্টেডিয়ামে অস্থায়ী জেল তৈরি করেছে। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে তাদের আটক করে ওই দুটি জেলে রাখা হবে। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষ যাতে এই আন্দোলনের জেরে অসুবিধার মুখে না পড়েন সেদিকেও লক্ষ রাখা হচ্ছে।
কৃষকদের কর্মসূচির আগে দিল্লিতে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। ফিরোজপুরের মাসটেক গ্রামের গুরমিত সিং বলেন, ‘একা ফিরোজপুরই ১০০টিরও বেশি ট্রাক্টর-ট্রলি পাঠিয়েছে। আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে রাজ্যজুড়ে আরও কৃষক আসছেন।’
রাজপুরার তখতুমাজরা গ্রামের কুলদীপ সিং উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন,‘ তারা নিজেরাই আমাদের সাথে এমন একটি প্রাচীর তৈরি করছে যেন আমরা সন্ত্রাসবাদী এবং এমনকি এই দেশের অংশও নই। তাহলে তারা কৃষকদের কাছে কী বার্তা দিচ্ছেন? এখন পর্যন্ত, মাত্র কয়েকটি ইউনিয়ন এই প্রতিবাদের অংশ, তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে সব কৃষক আগের মতোই হাত মেলাবে।’
ফিরোজপুর জেলার সরদারা সিং যোগ করেছেন, ‘আমাদের অধিকাংশই সীমান্ত জেলা ফিরোজপুর, অমৃতসর, গুরুদাসপুর, তারান তারান থেকে আসছেন; তাই, আমরা কঠিন পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত।